রাজশাহী: নির্বাচন কমিশনার (ইসি) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেছেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থীকে পোলিং এজেন্ট দিতে হবে।
নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সেসব এজেন্টের তথ্য আমরা পুলিশের কাছে দেব। তারা তদন্ত করবে। ওয়ারেন্টভুক্ত কোনো আসামি যেন পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালন করতে না পারে, তা খেয়াল রাখা হবে।
শাহাদাত হোসেন আরো বলেন, নির্বাচনে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ সাজানো মামলা দিয়ে কাউকে যেন হয়রানি করা না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ভোটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব, যেকোনো মূল্যে আমরা তাদের নিরাপত্তা দেব। আর প্রচারে ককটেল হামলা বা কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে রাসিক নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনা ঘটিয়ে নির্বাচনকে যাতে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সেই সাথে প্রত্যেক প্রার্থীর কর্মী, সমর্থক ও এজেন্টরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন কীভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করা যায়, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
নির্বাচনের দিন প্রত্যেক ভোটার যাতে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, প্রত্যেক প্রার্থী যাতে সমানভাবে নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ পায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে নগরীর সাগরপাড়ায় বিএনপির গণসংযোগ চলাকালে ককটেল হামলার বিষয়টি উল্লেখ করে শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
রাজশাহী সিটি নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘এটা প্রার্থীদের নির্বাচনী সংস্কৃতি।
তবে এখন পর্যন্ত রাজশাহী সিটির নির্বাচনী পরিবেশ অসহিষ্ণু হওয়ার কোনো অভাস আমরা পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমানের সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির বৈঠকে বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ।
এ ছাড়া বৈঠকে রাজশাহীর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আমিনুল ইসলাম, মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার, জেলা প্রশাসক এস এম আব্দুল কাদের, নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ আমিরুল ইসলামসহ র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসারের বিভাগীয় পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির নেতাকর্মীদের সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এমন অভিযোগের উত্তরে শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, এমন কোনো ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।
আর আজ ককটেল বিস্ফোরণের যে ঘটনা ঘটেছে, এমন ঘটনারও যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্যও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনে পাল্টাপাল্টি যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে সেগুলোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের কথা উল্লেখ করে ইসি শাহাদাত হোসেন বলেন, নির্বাচনের দিন নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এই ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্ব দেবেন।
এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবির একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। নির্বাচনে ১০ জন বিচারিক হাকিম কাজ করবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে র্যাব ও পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে।
ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তাদের পাশাপাশি প্রতিটি কেন্দ্রে ২২ থেকে ২৪ জন করে আনসার সদস্য থাকবে।
রিটার্নিং অফিসারকে সহযোগিতার করার জন্য ১০ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার থাকবেন। এ ছাড়া ইসির পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নিজস্ব পর্যবেক্ষক থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কেউ বৈধ অস্ত্র বহন বা প্রদর্শন করতে পারবেন না। ভোটের স্বাভাবিক সময় নিয়ে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সব বাস-ট্রাক, মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
নির্বাচনে যেকোনো ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক থাকবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।