ডেস্ক রিপোর্ট : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকালকার প্রযুক্তির যুগটা আমরা এত ভালো করে বুঝি, মানুষ এত ভালো বোঝে যে আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলাপও তৈরি করে দেওয়া যাবে। কঠিন কাজ না। কোনো কঠিন কাজ না এটা। সো সিম্পল।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন।
‘মনের মধ্যে ধিকিধিকি আগুন জ্বলছে’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আপনারা তো নিজেরাই ভালো করে জানেন, ফেসবুক দেখেন না সবাই? দেখছেন না? কার কী সমস্ত বের হচ্ছে, কার্টুন। এর গলা ওইখানে, ওর গলা এইখানে। দেখেন কি না বলেন। যাচ্ছে তো। এটাই তো করেছেন আপনারা। আপনারা করেন না, এ রকম কোনো কাজ তো নেই। এবং একটা গণতন্ত্রকে হত্যা করে সেটাকে জাস্টিফাই করার জন্য, যত রকমের অস্ত্র আছে, আপনারা ব্যবহার করছেন। প্রত্যেকটা মানুষ বোঝে যে আপনারা কী করছেন। এবং তাদের মনের মধ্যে ধিকিধিকি আগুন জ্বলছে, যে কখন আপনারা যাবেন। কখন পরিবর্তনটা হবে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই ব্লেম গেমটা আপনারা করছেন, আমাদের ব্লেম করার জন্য।’
কয়েক দিন আগে রাজশাহীতে বিএনপির নির্বাচনী সভায় ককটেল হামলা হয়। হামলার পরদিন ‘আগামীর রাজশাহী’ নামে একটি ফেসবুক পেজে রাজশাহীতে ককটেল হামলায় বিষয়ে একটি ফোনালাপের কথোপকথনের রেকর্ড প্রকাশ পায়। পুলিশ দাবি করে, হামলা চালানোর পর এই কথোপকথন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর মধ্যে হয়েছে। এতে যাকে মন্টু নামে দাবি করা হচ্ছে তিনি টিপুকে বলেছেন, ‘ভাইয়ার (তারেক রহমান) কাছে ক্রেডিট নেওয়ার জন্য দুইজনকে দিয়ে এই বোমা হামলা চালানো হয়েছে।’ ওই দিন রাতে নিজ বাড়ি থেকে মতিউর রহমান মন্টুকে আটক করে পুলিশ।
ওই আটক ও ফোনালাপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল গণভবনে বলেন, বিএনপি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণের কাছে ভোট চেয়ে ব্যর্থ হয়ে ‘ব্লেম গেমে’ নেমে পড়েছে। বিএনপি যখন দেখল যে জনগণের কাছে গিয়ে সাড়া পাচ্ছে না, তখন একটা ব্লেম গেম শুরু করল এবং হাতেনাতেই ধরা পড়ল। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ ছিল, তাই তারা তদন্ত করে বের করতে চাইল, কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
আজ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।
‘সমাবেশ করার আগে আমরা ভয় পাই’
বিএনপি কোনো সভা-সমাবেশ করার আগে নিজেরাই ভয় পায় জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার দলের একটি মিটিং করছি, এর মধ্যে কি আমার দলের কেউ বোমা মারবে? আপনাদের মনে আছে, নয়াপল্টনের সামনে আমরা বিরাট মিটিং করছিলাম। সেদিন ১৫৪ জন গ্রেপ্তার হলো। আমি যখন ওই মিটিংয়ে ট্রাকের ওপর উঠলাম, তখন নাইটিংগেল মোড়ে দুইটা পটকা ফুটল। সেদিন মাহমুদুর রহমানকে যেই লোক পিটিয়েছেন, এই লোক সেদিন সেখানে ছিল। আমরা যেকোনো সময় সমাবেশ করার আগে ভয় পাই। কারণ ওই যে ব্লেম গেম। ওরাই পটকা মারবে, আর ওরাই আমাদের দোষ দিবে।’
‘মাহমুদুর রহমানকে আমি অনেক পছন্দ করি’
কুষ্টিয়ায় আদালত প্রাঙ্গণে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে ফ্যাসিবাদের প্রতিধ্বনিরা বুকে পাড়া দিয়ে বসে গেছে। মাহমুদুর রহমানকে আমি অনেক পছন্দ করি। তাঁর মতের সঙ্গে আমার অনেক মিল আছে। সেই মাহমুদুর রহমানের কী হাল করেছে, দেখেছেন আপনারা। কুষ্টিয়ায় বাংলাদেশের এখন আর কোনো জনপদ নেই। কুষ্টিয়া এখন সম্পূর্ণভাবে কিছু সন্ত্রাসী, প্রশাসনও সেখানে সন্ত্রাসী হয়ে গেছে, পুলিশ সেখানে সন্ত্রাসী হয়ে গেছে। ওখানকার যে রাজনৈতিক নেতা, উনি সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী। অথচ এই কুষ্টিয়াতে আওয়ামী লীগের লোকেরা পালিয়ে বেড়াত। এই কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্যে ঈদের জামাতে যাঁরা এখন মন্ত্রী আছেন, তাঁদের ছেলেপেলেরা গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে। ভুলে গেলে চলবে না। ওই কারণেই মনে করাই যে অতীতকে একটু মনে করুন। অতীতকে মনে না করলে নিজেকে চিনবেন না।’
এ ছাড়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খনি থেকে কয়লা উধাও, ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণ মিশ্র ধাতুতে পরিণত হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। সরকারের দুঃশাসনেরই ধারাবাহিকতা মাত্র।’
‘বিচার ব্যবস্থার ওপর কীভাবে আস্থা রাখব?’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আইনি সুবিধা থেকে বঞ্চিত দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘তাঁকে আটক রাখার জন্য উচ্চ আদালতও সহযোগিতা করছে। তা না হলে এমন নজির নেই যে আপিল বিভাগের জামিন উচ্চ আদালতে আটকে দেয়। আমরা বিচার ব্যবস্থার ওপর কীভাবে আস্থা রাখব?’
এনপিপির সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া প্রমুখ।
এদিকে, মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের মানববন্ধনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। দেশের মানুষ আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের পরিবর্তন আনার জন্য মাঠে নামব। এবং দেশে একটু সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করব।’