নয় বছর পর বিদেশে সিরিজ জয় টাইগারদের

bangladesh masrafiস্পোর্টস ডেস্ক: সেই পুরনো পথে হাঁটতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজ হারের পর হতাশার চাদর ঢেকে দিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। ওয়ানডে সিরিজে সেই চাদর সরে গেল এক ঝটকায়। শনিবার রাতে সেন্ট কিটসে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটা ১৮ রানে জিতে নিলো বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ৪৮ রানে জিতেছিল টাইগাররা। দ্বিতীয় ম্যাচে মাত্র ৩ রানে হেরে যাওয়ায় সেদিন সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়নি। তবে অঘোষিত ফাইনালে দারুণ এক জয়ে সিরিজ নিজেদের করল টাইগাররা। তাতে দুই বছর পর সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলদেশ। আর বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয় ৯ বছর পর। ২০০৯ সালে সর্বশেষ বিদেশে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ।

সেন্ট কিটসের টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩০১ রান করে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে যা টাইগারদের সর্বোচ্চ ইনিংস। তামিম ইকবাল এদিনও করলেন সেঞ্চুরি। প্রথম ওয়ানডেতেও যার ব্যাট থেকে এসেছিল সেঞ্চুরি। ফিফটি করলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিততে হলে করতে হতো রেকর্ড। কারণ ওয়ার্নার পার্কে তিনশ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই কখনো। ক্যারিবীয়রাও পারেনি এদিন। ক্রিস গেইল প্রথমে ভয় ধরালেন। এরপর সাই হোপ ও রোভমান পাওয়েল দারুণ চেষ্টা করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাসি বাংলাদেশের।

সিরিজ জয়ের পর্বটা গায়ানাতেই সেড়ে রাখতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩ রানের নাকটীয় হারে সেটি হয়নি। তার আগে গায়ানাতেই প্রথম ওয়ানডেতে ৪৮ রানের দারুণ জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশের। সিরিজে ১-১ এ সমতা নিয়ে এদিন দুই দল খেলতে নামল। সেন্ট কিটস বলে একটু ভয় ছিল। কিন্তু এখানেও গায়ানার দুর্দান্ত বাংলাদেশকেই খুঁজে পাওয়া গেল। বরং বলা ভালো গায়ানার চেয়েও আরো দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশ। তাইতো গায়ানায় প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টাইগাররা নিজেদের সর্বোচ্চ রানের স্কোর গড়ার পর এদিন সেটি নতুন করে লিখল বাংলাদেশ। স্লগ ওভারে দারুণ বল করলেন রুবেল, মোস্তাফিজ। যেখানে রোভমান পাওয়েল ভয় ধরাচ্ছিলেন। তবে রুবেল-মোস্তাফিজরা শেষ তিন ওভারে স্নায়ুর লড়াই জিতলেন ভালোভাবে।

জিততে হলে শেষ ১০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে করতে হতো ১০৯ রান। হাতে ৬ উইকেট। বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে সাই হোপ তখন ব্যাট করছেন ৫৬ রানে। অন্য প্রান্তে খুনে মেজাজে রোভমান পাওয়েল। তবে ৪৪তম ওভারে হোপকে ফেরান মাশরাফী। কিন্তু রোভমান পাওয়েলকে থামানো যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিতই থেকে গেছেন। তবে শেষ ওভারগুলোতে তাকে অতিদানবীয় হতে দেননি রুবেল-মোস্তাফিজরা।

শেষ ৩ ওভারে ক্যারিবীয়দের সামনে সমীকরণে দাঁড়ায় ৪০ রানের। মোস্তাফিজ ৪৮তম ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে হোল্ডারের উইকেট নেন। ৪৯তম ওভারে রুবেল হোসেনও খরচ করেন মাত্র ৬ রান। তাতে শেষ ওভারে জিততে ক্যারিবীয়দের দরকার পড়ে ২৮ রান। মোস্তাফিজের প্রথম বলে ছক্কা মেরে রোভমান পাওয়েল ভয় ধরালেন। কিন্তু এরপর আর পারেননি অমন কিছু করতে। মোস্তাফিজ পরের ৫ বলে ব্যয় করেছেন মাত্র ৩ রান। তাতেই দারুণ জয় টাইগারদের।

শুরুতে গেইল ভয় ধরিয়েছিলেন। ৭৩ রান করেন ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব। যাকে ফেরান রুবেল। তার আগে লুইসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মাশরাফী। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ২ উইকেট মাশরাফীরই। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেন।

এর আগে জয়ের আসল ভিত্তিটা স্থাপন হয় ব্যাটসম্যানদের হাতে। তামিম ইকবাল টানা তিন ম্যাচে ছিলেন দুর্দান্ত। প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ১৩০। দ্বিতীয় ম্যাচে ৫৪ রান। এ ম্যাচেও করলেন সেঞ্চুরি। ১২৪ বলে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন এই ড্যাশিং ওপেনার। যা তার ক্যারিয়ারের একাদশ ফিফটি। আর সিরিজে ২৮৭ রান করে করলেন রেকর্ড। তিন ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিদেশি কোনো দলের হয়ে যা সর্বোচ্চ।

কৃতিত্ব এরপর মাহমুদউল্লাহর। পাঁচ নম্বরে নেমে যিনি ৪৯ বলে ৬৭ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলেছেন। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় সাজিয়েছেন তার ইনিংস। কৃতিত্ব সাকিব আল হাসান ও মাশরাফী বিন মোর্ত্তজারও। সাকিব এদিন পারেননি টানা তৃতীয় ফিফটি তুলে নিতে। তবে ৩৭ রান করার পথে তামিম ইকবালের সাথে আবারো তৃতীয় উইকেটে উপহার দিয়েছেন দারুণ জুটি। এদিন ৮১ রান উপহার দেন এই দুজন। আর সাব্বির ও মোসাদ্দেককে নিচে নামিয়ে মাশরাফী খেলতে নেমেছিলেন ছয় নম্বরে। ২৫ বলে ১ ছক্কা ও ৪ চারে ৩৬ রান করেছেন তিনি। তাতে ৩০০ পেরোনো সংগ্রহ পায় বাংলাদেশের।

নয় বছর আগে বাংলাদেশ বিদেশে সর্বশেষ সিরিজটি জিতেছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে। তার ঠিক আগের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে করেছিল হোয়াইটওয়াশ ৩-০ ব্যবধানে। সেবার টেস্ট ও ওয়ানডে দুই সিরিজেই ক্যারিবীয়দের তাদের মাটিতেই হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। তবে সেটি দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে। বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্বে সেবার খেলেননি শীর্ষ ক্রিকেটাররা। এবার অবশ্য প্রথম সারির উইন্ডিজদের হারিয়েই ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ নিল বাংলাদেশ।

দারুণ জয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল। প্রথম ওয়ানডেতেও ম্যাচ সেরা ছিলেন তিমি। পুরো সিরিজে দুর্দান্ত খেলে সিরিজ সেরাও হয়েছেন তামিম।