ডেস্ক রিপোর্ট: রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ হবে তিন সিটিতে। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গতকাল প্রত্যেক কেন্দ্রে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী মালামাল পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসাররা। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বড় দুই দলের বাঁচা-মরার লড়াই হবে আজ তিন সিটির ভোটের মাঠে। ভোট নিয়ে নানা শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটি ইসিকে জানিয়েছে, বর্তমানে তিন সিটিতে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের। তিন সিটিতে কিছুটা আতঙ্ক থাকলেও ভোট উৎসব পালনে প্রস্তুত ভোটাররা। কী হবে আজ তিন সিটিতে সে প্রশ্ন সবার মুখে মুখে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পাঁচ মাস আগের এ সিটি ভোটকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। গাজীপুর-খুলনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিন সিটিতে যাতে কোনো ধরনের ভুল-ত্রুটি ও অনিয়মের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা হবে বলে জানিয়েছে ইসি। তিন সিটিতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোটারদের কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় সবার নজর থাকছে তিন সিটির ভোটে। সংসদ নির্বাচনের আগে তিন সিটি নির্বাচনকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-বিএনপি। নৌকা-ধানের শীষের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। জনগণের কাছে কোন প্রতীকের কেমন কদর তাও প্রমাণ হবে এ নির্বাচনে।
অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্য দিয়ে শনিবার মধ্যরাতে প্রচারণা শেষ হয়েছে তিন সিটিতে। মিছিল-শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ থাকবে ১ আগস্ট পর্যন্ত। সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সিটি এলাকার বাসিন্দা নন এমন ব্যক্তিদের ২৭ জুলাই রাত ১২টা থেকে নির্বাচনী এলাকায় অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে সিটি করপোরেশনের নতুন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ৮ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি ভোটার আজ ভোট দেবেন। এ দিন নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে। মাত্র ১৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোট হবে। বাকি সব কেন্দ্রে ভোট হবে ব্যালট পেপার ব্যবহার করে সনাতন পদ্ধতিতে। তিন সিটিতে মেয়র পদে মোট ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর নির্বাচনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার-ভিডিপির প্রায় ১২ হাজার সদস্য। তিন নগরীতে এই নির্বাচন পরিচালনায় ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা। নির্বাচন পরিচালনায় থাকবেন কমিশনের সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। আর প্রায় পাঁচশ পর্যবেক্ষক ও ছয় শতাধিক সাংবাদিক এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। সেই সঙ্গে ভোট কেন্দ্রের পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে রাজশাহীতে ১২, বরিশালে ১২ ও সিলেটে ১১ জন ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা থাকবেন। রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সিপিবি, বাসদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল অংশ নিলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রধান দুই দলে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে তিন সিটি ভোটের গুরুত্ব অনেক। এ সিটি নির্বাচন যাতে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, শনিবার মধ্য রাত থেকে তিন সিটিতে সব ধরনের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। প্রভাবশালীরা নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করলে বা অবৈধ প্রভাবের চেষ্টা করলে পুলিশ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছে ইসি। ভোটের তিন দিন আগ থেকে ভোটের পর আরও তিন দিন পর্যন্ত বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের জন্য অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
এক নজরে তিন সিটি : রাজশাহী : এ সিটিতে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২১৭ জন। মেয়র প্রার্থী পাঁচজন। কাউন্সিলর প্রার্থী ১৬০ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন ৫২ জন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন—আওয়ামী লীগের এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), বিএনপির মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল (ধানের শীষ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মো. হাবিবুর রহমান (কাঁঠাল), গণসংহতি আন্দোলনের মো. মুরাদ মোর্শেদ (হাতি), ইসলামী আন্দোলনের মো. শফিকুল ইসলাম (হাতপাখা)। এ সিটিতে ভোটার ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন এবং নারী ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন। সাধারণ ওয়ার্ড ৩০, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০। ভোট কেন্দ্র ১৩৮ ও ভোটকক্ষ ১০২৬টি। তবে ১৩৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৪টিকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ঝুঁর্কিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। সিলেট : এ সিটিতে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১৯৭ জন। এর মধ্যে মেয়র প্রার্থী সাতজন। কাউন্সিলর প্রার্থী ১২৭ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ৬৩ জন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন—আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান (নৌকা), বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী (ধানের শীষ), মহানগর জামায়াতের আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (টেবিল ঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান (হাতপাখা), বাসদের মো. আবু জাফর (মই), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. এহছানুল হক তাহের (হরিণ), বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম (বাস)। যদিও তিনি নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এ সিটিতে ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন এবং নারী ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। সাধারণ ওয়ার্ড ২৭, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৯। বরিশাল : এ সিটিতে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সংখ্যা ১৩৬ জন। এর মধ্যে মেয়র প্রার্থী সাতজন। কাউন্সিলর প্রার্থী ৯৪ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ৩৫ জন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন— আওয়ামী লীগের সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ (নৌকা), বিএনপির মো. মজিবর রহমান সরোয়ার (ধানের শীষ), সিপিবির আবুল কালাম আজাদ (কাস্তে), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ওবাইদুর রহমান মাহাবুব (হাতপাখা), বাসদের মনীষা চক্রবর্ত্তী (মই), জাতীয় পার্টির মো. ইকবাল হোসেন (লাঙ্গল) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বশীর আহমেদ ঝুনু (হরিণ)। এ সিটিতে ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন এবং নারী ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। সাধারণ ওয়ার্ড ৩০, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০। ভোট কেন্দ্র ১২৩ ও ভোটকক্ষ ৭৫০টি। এ সিটির ৪টি ওয়ার্ডের ১১টি কেন্দ্রে ৭৮টি বুথে ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম পদ্ধতিতে। আর ১২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫০টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) ও ৬২টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ১১টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ।
সর্বশেষ জয়-পরাজয়ের চিত্র : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট চার সিটি (রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনায়) ভোট হয় এক দিনে। তাতে আওয়ামী লীগ জয় পায় চারটিতে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১৫ জুনে ভোট হয় একসঙ্গে চার সিটিতে; তাতে জয় পায় বিএনপি। এবারও রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটে একসঙ্গে ভোট হচ্ছে। অবশ্য ইতিমধ্যে খুলনায় জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ।
প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন- শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট ও কাজী শাহেদ, রাজশাহী এবং রাহাত খান, বরিশাল। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন