মিমের বাসায় গিয়ে ক্ষমা চাইলেন নৌমন্ত্রী

ডেস্ক রিপোর্ট: বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় নিহত দিয়া খানম মিমের বাসায় গিয়ে তার পরিবারকে সান্ত্বনা জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকদের নেতা ও নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।

এই দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তুমুল আন্দোলনের মুখে সমালোচনায় বিদ্ধ শাজাহান বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় মিমের মহাখালীর দক্ষিণপাড়ার বাসায় যান।

এ সময় মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম, মা রোকসানা বেগম, বড় বোন রোকেয়া খানম রিয়ার সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটান।

এ সময় নৌমন্ত্রী অন্যান্য অনেক বিষয়ের পাশাপাশি গত রবিবার দুর্ঘটনার দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নে হেসে জবাব দেয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।

নৌ মন্ত্রী বলেন, ‘আমি হয়ত হেসে কথা বলেছি বলে আপনারা কষ্ট পেয়েছেন। আমি অন্য একটি কথা বলেছিলাম, কিন্তু অ্যাক্সিডেন্টের বিষয়টিতে কথা হচ্ছে আমি জানতাম না। এর জন্য আমি দুঃখিত, আমাকে আপনারা ক্ষমা করে দেন।’

দুর্ঘটনার ঘটনায় এমনিতেই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীকে নৌমন্ত্রীর ওই হাসিমুখ আরও উত্তেজিত করে। সেই সঙ্গে দেশবাসীও ক্ষুব্ধ হয় তার ওপর। আর তীব্র সমালোচনার মুখে সোমবার মন্ত্রী বলেন, তার সেভাবে হাসি উচিত হয়নি। আর নিজের ছবি দেখে নিজেই মর্মাহত হয়েছেন তিনি।

এরপরও সমালোচনা না থামায় মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।

ছাত্ররা নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন করছে, তাতে যে নয়টি দাবি উঠে এসেছে তার একটি ছিল নৌমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা। এরই মধ্যে তিনি সেটি করেছেন, তারপরও ক্ষোভ মেটেনি।

চতুর্থ দিনের আন্দোলনে শাহবাগ এলাকায় শাজাহান খানের কুশপুতুল দাহ হয়েছে। আর বিভিন্ন কর্মসূচিতে তার পদত্যাগও দাবি করা হয়েছে।

দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীরও নৌমন্ত্রীর ওই হাসিতে দুঃখ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

জাহাঙ্গীর নিজেও আন্তঃজেলায় বাস চালান। আর তাদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজহান খান। সে হিসেবে জাহাঙ্গীরের নেতা হলেন শাজাহান।

টানা তৃতীয় দিন নগরীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের মধ্যে দুপুরে সচিবালয়ে নৌমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যে বৈঠক হয়, সেটি শেষ করে শাজাহান খান মিমের বাসায় যাওয়ার ইচ্ছার কথা বলেন।

মেয়ের মৃত্যুর বিষয়ে তার বাবা নৌমন্ত্রীকে বলেন, ‘দেখেন, এটা তো আসলে অ্যাক্সিডেন্ট না, একটা হত্যাকাণ্ড। ওরা আমার মেয়েটাকে ইচ্ছা করে হত্যা করেছে। ওরা অদক্ষ ড্রাইভার। অদক্ষ ড্রাইভারদের জন্য আজ দেশের এই অবস্থা।’

আগের দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল তার বাড়িতে উপস্থিত হওয়ার পর জাহাঙ্গীর তাকে পরিবহন খাতের নৈরাজ্য কোথায় কোথায় সেটা বলে দিয়েছিলেন। নৌ মন্ত্রীকেও সেটা বললেন তিনি।

জাহাঙ্গীর বলেন বলেন, ‘আমি একজন ড্রাইভার। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। যেই গাড়িগুলা চলছে, সেগুলোর লাইসেন্স আছে কি না, আপনারা দেখেন। অদক্ষ ড্রাইভাররা কত বাবা-মায়ের বুক খালি করছে, আপনারা দেখেন।’

রবিবার বিমানবন্দর সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর উঠে যায় জাবালে নুর পরিবহনের একটি বাস। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুটি বাস যাত্রী নিতে নিজেদের মধ্যে পাল্লা দেওয়ার সময় একটি বাস চাপা দেয় শিক্ষার্থীদের। এতে মিম ছাড়াও আরেকজন ছাত্র মারা যান। আহত অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয় আরও ছয় জনকে।

নৌ মন্ত্রী পরিবহন শ্রমিকদের নেতা হিসেবে তাদের পক্ষ হয়ে নানা সময় কথা বলেছেন। কিন্তু তার এই অবস্থান এই খাতের নৈরাজ্যকে উস্কে দিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। আর যে কোনো সড়ক দুর্ঘটনা হলে এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী না হয়েও তাকেও জবাবহিদিতা করতে হয়।

মন্ত্রীকে মিমের বাবা বলেন, ‘২৭ বছর ধরে আমি গাড়ি চালাই। আমার হাতে কোনোদিন কোনো দুর্ঘটনা ঘটে নাই। কেন তাহলে এসব অদক্ষ চালকের জন্য আমার মেয়ে মারা গেল?’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মতোই নৌ মন্ত্রীকেও পরিবহন খাতের নৈরাজ্য দূর করতে লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনাসহ নানা পরামর্শ দেন মিমের বাবা।