ঢাকা: জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় নিহত শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিমের স্বজনেরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের মাধ্যমে এই অনুরোধ জানান মিমের বাবা জাহাঙ্গীর ফকির ও আবদুল করিমের মা মহিমা বেগম।
জাহাঙ্গীর ফকির বলেন, ‘সবার কাছে আমার অনুরোধ, যার যার সন্তান, আমরা অভিভাবকরা বুঝিয়ে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাই। আমরা আশা করি, একটা শক্ত বিচার পাব। এটা প্রধানমন্ত্রীর নিজের মুখের কথা।’
তিনি জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বুধবার তাদের বাসায় গিয়েছিলেন সমবেদনা জানাতে। তিনিও দোষীদের বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর ফকির বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এটা কেউ চাপিয়ে রাখতে পারবে না। এর বিচার হবেই। বিচার হলে আমরা দেশের মানুষ সবাই শান্তি পাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন। আমরা খুব কৃতজ্ঞ।’
আর আবদুল করিমের মা মহিমা বলেন, ‘তোমরা সবাই আমার সন্তানের জন্য রাস্তায় নেমেছ। সবই হয়ে গেছে। এখন তোমরা যে যার ঘরে উঠে যাও। তোমাদের সবার কাছে অনুরোধ, তোমরা ঘরে ফিরে যাও।’
এ সময় মহিমা বেগমের পাশে থাকা করিমের বোন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন। আমরা স্যাটিসফাই হয়েছি। তোমরাও স্যাটিসফাই হও।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দোয়া করি, তোমরাও দোয়া কর তোমাদের বন্ধুদের জন্য। সবাই ঘরে ফিরে যাও।’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর ফকির, ভাই-বোন, মা এবং আবদুল করিমের মা মহিমা বেগম, বোন ও পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের প্রিন্সিপাল নূর নাহার ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন জানিয়েছেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন— শহীদ রমিজউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজকে ৫টি বাস দেয়া হবে, স্কুলসংলগ্ন বিমানবন্দর সড়কে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে, প্রতিটি স্কুলসংলগ্ন রাস্তায় স্পিড ব্রেকার নির্মাণ ও স্কুলের জন্য বিশেষ ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ করা হবে।
এদিন গণভবনে পৌঁছলে দিয়া খানম মিমের বাবা ও আবদুল করিমের পরিবারের সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী সান্ত্বনা দেন। তিনি দুই পরিবারকে ২০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র তুলে দেন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বেপরোয়া বাস বিমানবন্দর সড়কের জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভারের গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই দু’জন নিহত হন।
নিহতরা হলেন— শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল করিম ও একাদশ শ্রেণির দিয়া খানম মিম। এ ঘটনায় দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম রোববার রাতেই ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন। বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয় ওই মামলায়।
ওই ঘটনার পরপরই দোষীদের বিচার চেয়ে ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নামে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রত্যেক দিন সড়কে নেমে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
তারা সড়কে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহনের লাইসেন্স চেক করছেন। বিভিন্ন সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ঢাকা। সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।