জেএমবির শীর্ষ নেতা `বোমারু মিজান’ ভারতে আটক

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির শীর্ষ নেতা মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানকে ভারতে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জঙ্গি মিজান ওরফে জাহিদুল ইসলাম সুমন ওরফে বোমা মিজান মূলত ‘বোমারু মিজান’ নামেই বেশি পরিচিত। আর ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে তার নাম ‘কাওসার’।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ভ্যানে হামলা চালিয়ে জেএমবির জঙ্গিরা তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির শীর্ষ নেতা এই জঙ্গি মিজান বাংলাদেশে বহু নাশকতার হোতা।

সোমবার ভারতের বেঙ্গালুরু শহরের এক গোপন আস্তানা থেকে ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ তাকে গ্রেফতার করার পর আবারও আলোচনায় চলে এসেছে।

২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংয়ের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে বোমা মেরে ও গুলি করে আরও দুই জঙ্গির সঙ্গে বোমারু মিজানকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

বাকি দুই জঙ্গি ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি ও রাকিব ও রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ।

এর মধ্যে হাফেজ মাহমুদকে ওই দিন দুপুরেই টাঙ্গাইলে স্থানীয় জনতার সহায়তায় আটক করে পুলিশ। পরে গভীর রাতে পুলিশের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন তিনি। অন্যদিকে বোমারু মিজান ও সালেহীনের আর খুজেঁ পাওয়া যায়নি।

তেজগাঁও পলিটেকনিকের ছাত্র বোমারু মিজান এরপর প্রতিবেশি দেশ ভারতে পালিয়ে যায়। হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এবং বিচারাধীন ১৮ মামলার আসামি বোমারু মিজানের বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহে।

গোয়েন্দারা জানান, চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিকে ২০০৫ সালে মিজানের তৈরি বোমা দিয়ে সারা দেশে হামলা চালানো হয়েছিল। চট্টগ্রামের হামলাগুলোতে নেতৃত্ব দেন মহম্মদ ও মিজান।

এর মধ্যে মিজান সংগঠনটির বোমা বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাদের পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে। বোমা হামলার একাধিক মামলায় এদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়।

তবে মিজানকে কাশিমপুর কারাগার থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় বোমা হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেয় জেএমবি সদস্যরা। সেই থেকে সে পলাতক ছিল।

এদিকে ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) ২০১৬ সালে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, ভারতের বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত বোমারু মিজান কলকাতার আশপাশেই ঘাপটি মেরে আছে।

পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর একটি বিস্ফোরণে দু’জন নিহত হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে, ওই বিস্ফোরণস্থলটি আসলে জামাতুল মুজাহিদিনের আস্তানা এবং বোমা ও অস্ত্র তৈরির কারখানা।

প্রথম দিন থেকে জেএমবির যে ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়, তিনি হলেন কাওসার। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হওয়া জেএমবির দুই নারী সদস্য ও আরেক ব্যক্তি জানায়, কাওসারই মোটরবাইকে করে এসে ওই আস্তানায় তৈরি করা বোমা নিয়ে যেতেন।

কী পরিমাণ দেশি গ্রেনেড বানাতে হবে, সেটাও আগেভাগে বলে দিতেন তিনি। এমনকি, জঙ্গি আশ্রয়স্থল হিসেবে খাগড়াগড়ের ওই বাড়িটি নির্বাচনেও কাওসারের ভূমিকা ছিল।

বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় পরবর্তী সময়ে এনআইএ জানতে পেরেছে, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে পুলিশ ভ্যান থেকে ছিনতাই হওয়া জেএমবির জঙ্গি মিজানই হচ্ছে এই কাওসার।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরেই খাগড়াগড় মামলায় চার্জশিট দিয়েছে এনআইএ। তাই বিচার শুরু হওয়ার আগেই গোয়েন্দারা কাওসারকে ধরতে চান। এর কারণ, পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে জেএমবির পুনর্গঠিত হওয়ার চেষ্টা মাঝপথেই বানচাল করে দেওয়া যাবে, এড়ানো যাবে নতুন নাশকতার ঝুঁকিও।

এর আগে ২০১৪ সালের ২৪ মে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলায় বোমারু মিজানকে ২০ বছর এবং তার স্ত্রী হালিমা বেগমকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।

ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এ কারাদণ্ডের রায় দেন।

এর আগে ২০১২ সালের ৩ ‍জুন অপর এক অস্ত্র মামলায় ঢাকার অপর এক আদালত তাদের ৩৭ বছর কারাদণ্ড দেন। তারও আগে পৃথক দু’টি মামলায় তাদের ৩৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৫ মে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাবের একটি দল রাজধানীর মিরপুরে বোমারু মিজান ও তার স্ত্রী হালিমার একটি ভাড়াবাসা থেকে গ্রেনেড, অস্ত্র, গুলি ও বোমা তৈরির বিপুল সরঞ্জাম উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় র‌্যাবের ডিএডি আব্দুর রহিম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেছিলেন।

ওই বছরেরই ১৫ জুন আসামিদের অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে ১৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।