ঈদ উপলক্ষ্যে ঘরে ফেরার টিকেট যেন সোনার হরিণ। রোববার ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ঈদের টিকেট মেলেনি। ১৮ থেকে ২২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পরও অনেককে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।
বিভিন্ন কোটার নামে ট্রেনের অধিকাংশ টিকেট সংরক্ষণ করায় ঘরমুখো মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
বাস ও লঞ্চের টিকেটেও একই অবস্থা। বাস কাউন্টারগুলোয় ভিড় না থাকলেও ২০ ও ২১ আগস্টের টিকেট পাচ্ছেন না যাত্রীরা। আর লঞ্চের টিকেট প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ার অভিযোগ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধিকাংশ যাত্রীর চাহিদা ২০ ও ২১ আগস্টের টিকেটের দিকে। তাই কাঙ্ক্ষিত টিকেট না পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন যাত্রীরা।
এদিকে ৮ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রির শেষ দিন ছিল রোববার। এ দিন ২১ আগস্টের টিকেট বিক্রি করা হয়। কমলাপুর রেল স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, কাঙ্ক্ষিত টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় শত শত মানুষ।
সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রির শুরুতেই ২৬টি কাউন্টারের সামনে টিকেটপ্রত্যাশীদের লাইন আঁকাবাঁকা হয়ে টার্মিনাল ভবন ছাড়িয়ে রাস্তায় গিয়ে ঠেকে। আগের ৪ দিন যারা দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট পাননি, তাদের একটি অংশ রোববারও লাইনে ছিলেন। কিন্তু শেষদিনও টিকেট পাননি তাদের অনেকেই। সেই হতাতশায় স্টেশন ম্যানেজারের রুমে গিয়ে ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায় যাত্রীদের।
তাদের অভিযোগ, অধিকাংশ টিকেট বিশেষ কোটার জন্য রেখে দেয়া হয়েছে। কাউন্টার থেকে লোক দেখানো কিছু টিকেট বিক্রি করা হয়েছে। কোটার টিকেট নিয়েই ব্যস্ত রেল কর্মকর্তারা। ভিআইপি কোটার নামে চলছে দুর্নীতি।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, কমলাপুর থেকে প্রতিদিন টিকেটপ্রত্যাশীদের সংখ্যা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার হলেও আগাম টিকেট বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৬ হাজার ৮৯৫টি। আর ফিরতি টিকেট বিক্রি শুরু হবে ১৫ আগস্ট থেকে।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী জানান, টিকেট না পাওয়া যাত্রীরা একের পর এক অভিযোগ জানাচ্ছেন। তাদের প্রশ্নের শেষ নেই। তবে কাউন্টার থেকে ৬৫ শতাংশ টিকেট দেয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
একটি টিকেটও কালোবাজারি হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীদের বেশিরভাগই ৪টি করে টিকেট নিচ্ছেন। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। সবাইকে টিকেট দেয়া সম্ভব নয় স্বীকার করে তিনি বলেন, সাধারণ টিকেট বিক্রি করতে যে পরিমাণ চাপ সহ্য করতে হচ্ছে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি চাপ সহ্য করতে হচ্ছে ভিআইপি টিকেট দিতে।
শুক্রবার ও শনিবার লাইনে দাঁড়িয়েও না পেয়ে রোববার আবারও লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ট্রেনের টিকেটের জন্য। তবুও কাঙ্ক্ষিত টিকেট পাননি বলে হতাশা প্রকাশ করেন রাজশাহীর বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, সিল্কসিটি এক্সপ্রেসের ৩টি এসি টিকেট চেয়েছিলাম, না পেয়ে ২টি শোভন টিকেট নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হল। দুইদিন চেষ্টা করেও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ভালো আসনে বসিয়ে নিতে পারছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ তিনি।
চট্টগ্রামগামী সুর্বণ এক্সপ্রেসের টিকেটপ্রত্যাশী আফরোজা নিপা হতাশ হয়ে জানান, তিনি শনিবার সন্ধ্যা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে সুর্বণ এক্সপ্রেসসহ তূর্ণা ও মহানগর প্রভাতির টিকিট শেষ বলে মাইকিং করা হয়।
ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, সাধারণ কোটার টিকেট বিক্রি শেষ হলেও এখন ভিআইপি ও স্টাফ কোটার টিকেট বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ভিআইপি কোটার টিকেট নেয়ার নিয়ম থাকলেও অনেকেই বিলম্ব করছেন। যাত্রার দিন ১০ শতাংশ সিটবিহীন টিকেট দেয়া হবে। যাতে তারা দাঁড়িয়ে যেতে পারবেন।
এদিকে বাসের আগাম টিকেট নিয়েও চলছে হাহাকার। প্রায় সব রুটের এসি ও নন-এসি বাসের ২০ আগস্টের টিকেট নেই। এমনকি ২১ আগস্টের টিকিটেও রয়েছে সংকট।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, ৫ আগস্ট আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার কথা ছিল। ছাত্র আন্দোলনের কারণে তা হয়নি। ৭ আগস্ট থেকে পুরোদমে টিকেট বিক্রি শুরু হয়। তখনই বেশিরভাগ বাসের ২০ ও ২১ আগস্টের টিকেট শেষ হয়ে যায়।
রোববার কল্যাণপুর ও গাবতলীর বাস কাউন্টারে যাত্রী চাপ ছিল না। বিকেলের দিকে টিকেটপ্রত্যাশীদের ভিড় বাড়ে। তবে ভাগ্যগুণে দু-চারটি টিকেট কিনতে পেরেছেন কিছু যাত্রী।
অন্যদিকে লঞ্চের আগাম টিকেট বিক্রির সুবিধার্থে সদরঘাট লঞ্চ কোম্পানিগুলোর জন্য পৃথক কাউন্টার দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এসব কাউন্টার থেকে লঞ্চের টিকেট বিক্রি করছে না কোম্পানিগুলো। কেউ লঞ্চ থেকে আবার কেউ কেউ নিজস্ব কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি করেছে। এতে প্রভাবশালীদের দখলে চলে যায় লঞ্চের বেশিরভাগ টিকেট।
ঢাকা নদী বন্দরের উপপরিচালক আলমগীর কবির বলেন, ১০ আগস্ট থেকে কাউন্টারে টিকেট বিক্রির কথা থাকলেও কেউ বসেনি। অনলাইনে টিকেট বিক্রি করছে কয়েকটি লঞ্চ কোম্পানি। ১৫ আগস্ট থেকে কাউন্টার থেকে তৃতীয় শ্রেণীর টিকেট বিক্রির কথা রয়েছে।
সূত্র-যুগান্তর।