মিয়ানমার জঘন্য কাজ করেছে: প্রধানমন্ত্রী

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী প্রকাশিত একটি বইয়ে ভুয়া ছবি প্রকাশ করে যেভাবে রোহিঙ্গাদের নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, তাকে ‘জঘন্য কাজ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রধনিমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, “মিয়ানমার যা করেছে অত্যন্ত জঘন্য কাজ করেছে। নিজেরাই নিজেদের সম্মানটা খারাপ করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে নিজেরাই নিজেদের অবস্থান খারাপ করেছে।”

বিমসটেক সম্মেলন নিয়ে রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সঙ্কট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের ‘আসল সত্য’ প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গত জুলাই মাসে একটি বই প্রকাশ করে, যেখানে তিনটি ভুয়া ছবি ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

এর মধ্যে ১৯৭১ সালে ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের পর দুই বাংলাদেশির লাশ উদ্ধারের একটি ছবি ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর বইয়ে ক্যাপশনে বলা হয়েছে- সেটা রাখাইনে রোহিঙ্গাদের হাতে নিহত স্থানীয় বৌদ্ধদের ছবি।

মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গতবছর অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আর গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও গত দশ মাসে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। এর দায়ও বাংলাদেশের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি।

মিয়ানমার বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী সাত দেশের জোট বিমসটেকের সদস্য হলেও দেশটির নেত্রী সু চি এবার বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যাননি। তার বদলে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট।

চতুর্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতেই রোববার সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে একজন সাংবাদিক জানতে চান, বিমসটেক সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের সম্মেলনে সাধারণত দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো আনা হয় না। তবে রিট্রিট সেশনে মিয়ানমারের প্রেসিন্টের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।

“তিনি স্বীকার করেছেন যে আমাদের সাথে সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে। তারা বলেছেন, তারা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে প্রস্তুত। এটুকু বিষয়ে তার সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এছাড়া থাইল্যান্ডের প্রধানমন্তীর সঙ্গেও আমি কথা বলেছি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কখনও চায়নি প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো সংঘাতপূর্ণ অবস্থা তৈরি হোক।

“রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে আমরা সবসময় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। মিয়ানমার কখনও আপত্তি করে না। বলে নিয়ে যাবে। এটা ঠিক, বাস্তবতা হল- তারা বলে, কিন্তু করে না।”

আর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বইয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভুয়া ছবি দিয়ে অপপ্রচার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বাংলাদেশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথা মনে করিয়ে দেন।

“তারা ছবিটা নিয়ে যেটা করল, এটা আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, আমাদের এখানেও কিন্তু এরকম হয়েছে। প্রশ্নটা হল এরা শিখল কার কাছ থেকে।”

২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি জোটের আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভুয়া ছবি আসার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্মরণ করাতে চাই, জামাত-বিএনপি মিলে এ ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছিল।”