কারাগারে খালেদা জিয়ার ‘ক্যামেরা ট্রায়াল’ সংবিধানের লঙ্ঘন

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার বিচার করতে আদালত কারাগারেই বসানোর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাকে ক্যামেরা ট্রায়াল বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এটা সংবিধানের লঙ্ঘন বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব এমন অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মামলা এতদিন একটি বিশেষ আদালত তৈরি করে ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে চলছিল। এখন সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে নিচ্ছে। আমরা এটাকে একটা ক্যামেরার ট্রায়াল মনে করছি। কারণ, এটা একটা অত্যন্ত সেনসিটিভ ইস্যু। যে কারাগারের ভেতরে এখন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ট্রায়াল হবে, এটা প্রকাশ্যে পরিচালিত হতে হবে, এই ধরনের মামলা এবং এটা সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, সরকারি সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অধিকার হরণ করতে সংবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কী হতে পারে?’

ফখরুল বলেন, ‘একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতেই সরকার এটা করছে। অত্যন্ত হীন উদ্দেশ্যে এসব কার্যক্রম করছে ক্ষমতাসীনরা। এ ধরনের কার্যক্রম আসন্ন নির্বাচনকে প্রভাবান্বিত করবে। আমরা এটাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি। এটাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এটার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেব।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘সংবিধান যতবার ও যতগুলো সংশোধন হয়েছে-কোনোবারই ৩৫ ধারার সংশোধন করা হয়নি। আজ একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সেটার পরিবর্তন করছে সরকার।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, খালেদা জিয়ার মামলার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ।

নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে রাজধানীর বকশিবাজারের আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত ৫ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন মন্ত্রণালয়।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা বিচারের জন্য পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে বসবে অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত ৫। বর্তমানে এই কারাগারেই বন্দি আছেন খালেদা জিয়া।

তবে একে ‘আইন পরিপন্থী’ বলে উল্লেখ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় মোট আসামি চারজন। খালেদা জিয়া ছাড়া অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন।

২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করা হয়।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করে দুদক।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশীদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান। এ মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া অর্থদণ্ডও করা হয়। রায়ের পর খালেদা জিয়া রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজা ভোগ করছেন।