যশোরের ৯১টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ২৬টি কেন্দ্রে চিকিৎসক শুন্য

যশোর জেলায় ৯১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও চিকিৎসার হালচাল দেখলে মনে হয় এখানে চিকিৎসক পদ আছে কি?। কাগজ কলমে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্র গুলোতে চিকিৎসক ও সেবা কাজে নিয়োজিত জনবল পদ থাকলেও প্রকৃত পক্ষে চিকিৎসা সেবা প্রদান নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। অভিযোগ রয়েছে এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলের ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকরা যেতে অনীহা প্রকাশ করেন। আবার সরকারি সময় অনুযায়ী তাদের দেখা মেলেনা সপ্তার অধিকাংশ দিনের বিভিন্ন সময়। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকেরা বিভিন্ন অজুহাতে কর্মস্থল থেকে বের হয়ে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ও বিভিন্ন চুক্তিবদ্ধ ক্লিনিক,হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে দায়িত্ব পালনের কাজে ব্যস্ত থাকেন এমন অভিযোগ অনেকের।

 

যশোর সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান বিভাগ সুত্রে জানাগেছে, যশোর জেলায় ৯১টি ইউনিয়নে গড়ে ওঠা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রে গুলোর মধ্যে ২৬টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রে চিকিৎসক পদ শুন্য রয়েছে। এসব কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘদিন চিকিৎসক পদ শুন্য থাকায় ওই সব ইউনিয়ন গুলোতে নারী,পুরুষ ও শিশুরা বিভিন্ন সরকারি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাকী ৬৫টি কেন্দ্রে কাগজ কলমে চিকিৎসক পদ থাকলেও বাস্তবে তাদের দেখা মেলেনা সপ্তার অধিকাংশ দিনে। শুন্য পদগুলো পুরনে যশোর সিভিল সার্জন অফিস থেকে বারংবার স্বাস্থ্য মহাপরিচালক দপ্তরে চিকিৎসক শুন্য পদের চাহিদা পাঠানোর পরও কোন সুরাহা হচ্ছেনা।

 

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে আরো জানাগেছে,যশোরের ৯১টি ইউনিয়নের মধ্যে যশোর সদরে ১৫টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক থাকলেও সরকারি সময় অনুযায়ী অধিকাংশ স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক পাওয়া দুঃস্কর। এছাড়া, ঝিকরগাছা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১টি কেন্দ্রে চিকিৎসক পদ শুন্য, মণিরামপুর উপজেলায় ১৭টি ইউনিয়নের ৭টিতে চিকিৎসক থাকলেও ১০টিতে চিকিৎসক পদ শুন্য,বাঘারপাড়া উপজেলায় ৮টি ইউনিয়নের ৩টিতে চিকিৎসক থাকলেও ৫টিতে চিকিৎসক পদ শুন্য, চৌগাছা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ৮টিতে চিকিৎসক থাকলেও ৩টিতে চিকিৎসক পদ শুন্য, অভয়নগর উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে চিকিৎসক রয়েছে, কেশবপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৭টিতে চিকিৎসক থাকলেও ৩টিতে চিকিৎসক পদ শুন্য এবং শার্শা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ২টিতে চিকিৎসক পদ শুন্য বাকী ১০টি চিকিৎসক থাকলেও তাদের দেখা মেলা বড় দুঃস্কর। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সরকার জনগনের জন্য স্বাস্থ্য সেবা দোর গোড়ায় পৌছে দেওয়ার জন্য গত কয়েক বছরে হাজার সেবিকা ও চিকিৎসক পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করেছেন। ঠিকই চিকিৎসক ও সেবিকা এবং স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট জনবল বাড়লেও যশোরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত বিভিন্ন বয়সের নারী,পুরুষ ও শিশুরা সরকারের স্বাস্থ্য সেবার বিভিন্ন উদ্যোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের অধিকাংশ দীর্ঘদিন যাবত কাগজ কলমে হাজির থাকেন। চিকিৎসা নিতে যাওয়া বিভিন্ন বয়সের নারীপুরুষ ও শিশুরা চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে ঘন্টারপর ঘন্টা ধরে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রগুলোতে অপেক্ষা করে নিরুপায় হয়ে বাড়িতে ফিরে যান। সর্দি কাশি থেকে শুরু করে প্রাথমিক চিকিৎসার ধাপ দিনে দিনে সঠিক চিকিৎসার অভাবে বেড়ে এক সময় বড় রোগের কারণ হয়ে দেখা দিলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হতে বাধ্য হন। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা সেবা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে রেফার্ড করে জেলা শহরের সরকারি হাসপাতালে পাঠান। সেক্ষেত্রে সরকারের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে চিকিৎসক,সেবিকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনবল সৃষ্টি করে মাসে লক্ষলক্ষ টাকা ব্যয় হলেও উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক অনুপস্থিতির ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করলে উক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থার কথা নিশ্চিত কররেন সিভিল সার্জন ডাক্তার বিপ্লব কান্তি বিশ^াস। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পেতে স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যশোরের বিভিন্ন পেশার মানুষ।