যশোর পিডাব্লিউডির একজন ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তিনি বাড়ির প্লানপাশের নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়া শহরের তার নামে ও বেনামে বেশ কয়েকটি প্লট রয়েছে।
বিভিন্ন অভিযোগে জানা যায় পিডাব্লিউডির উপসহকারি প্রকৌশলী কামরুজ্জামান দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি ২০১৬ সালে যশোর পিডাব্লিউিডিতে উপসহকারি প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে ২০০৪ সালে তিনি রাজশাহীতে ছিলেন। এরপর ২০১৭ সালে তিনি নড়াইলে যোগদান করেন। নড়াইল থেকে ২০১৭ সালের শেষে আবার যশোর পিডাব্লিউডিতে যোগদান করেন। ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ বছর তিনি যশোর পিডাব্লিউডিতে কর্মরত রয়েছেন। একই জেলায় দীর্ঘদিন থাকার কারনে তিনি অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। পিডাব্লিউডির বিভিন্ন নির্মান কাজের সাইড দেখাশোনা করতে যেয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে হাািতয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এ ছাড়া বহুতল বাড়ির প্লান পাশের নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। যশোর শহরে ৭৫ ফিটের উপরে বাড়ি নির্মান করতে হলে বিল্ডিং কনসট্রাকশন কমিটির মাধ্যমে প্লান পাশ করাতে হয়। ৭ সদস্যের কমিটির আহবায়ক জেলা প্রশাসক। গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সদস্য সচিব। অন্য ৫ জন সদস্য। এরা হলেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, পৌরসভার প্রতিনিধি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) স্থপতি/প্রকৌশলী/পরিকল্পনাবিদ, উপজেলা প্রকৌশলী (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)। এই ৭ জন বিল্ডিং কনসট্রাকশন কমিটির সদস্য। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সমুহের আওতা বর্হিভূত এলাকায় সুউচ্চ ভবনের নকশা অনুমোদন ও ভবনের গুনগতমান নিশ্চিত করবে এই কমিটি। প্লান পাশের জন্য ২৬ টি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যয়ন নিতে হয়। প্লান পাশের আবেদন জমা পড়লে মিটিং ডাকা হয়। পিডাব্লিউডির নির্বাহী প্রকৌশলী সদস্য সচিব হওয়ায় সুবিধা হয়েছে উপসহকারি প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের। পিডাব্লিউডির নির্বাহী প্রকৌশলীর ফাইল মেনটেইন করে উপসহকারি প্রকৌশলী কামরুজ্জামান। আর এই সুযোগ কাজে লাগায় প্রকৌশলী কামরুজ্জামান। অভিযোগ রয়েছে প্লান পাশের ফাইল পুজি করে প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বাড়ির মালিকের সাথে যোগাযোগ করে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দাবি করেন। প্রকৌশলী কামরুজ্জামানের চাহিদা অনুযায়ি ঘুষ দেয়া না হলে তিনি ফাইল মিটিংয়ে উত্থাপন করেন না। ফলে প্লানও পাশ হয়না। বাধ্য হয়ে বাড়ির মালিকরা প্লান পাশের জন্য কামরুজ্জামানকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দেয়। ইতিপূর্বে শহরের ঢাকা রোডে নিটোল মটরসের ১০ তলা ভবনের প্লান পাশ করানোর জন্য কামরুজ্জামান ২ লাখ টাকা ঘুষ নেয়। এ ছাড়া সম্প্রতি শহরের পুরাতন কসবা কাজিপাড়া কাঠালতলা এলাকার হোসেন আলী গংয়ের ৯ তলা বাড়ির প্লান পাশ করানোর উপসহকারি প্রকৌশলী কামরুজ্জামান ২লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছে। একই এলাকার মসজিদের পূর্বপাশে এনামুল গংয়ের ৯ তলা বাড়ির প্লান পাশ করানো বাবদ উপসহকারি প্রকৌশলী কামরুজ্জামান অনুরুপ ঘুষ দাবি করেন। টাকার পরিমান বেশি হওয়ায় কামরুজ্জামানের সাথে ওই বাড়ির মালিকদের দেনদরবার চলছে। এ ভাবেই দুর্নীতির মাধ্যমে কামরুজ্জামান বহু বাড়ির মালিক ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আর এ সব ঘুষের টাকা দিয়ে কামরুজ্জামান শহরের চাঁচড়া রাজবাড়ি এলাকায় কিনেছেন ৪ টি প্লট। এ বিষয়ে কামরুজ্জামানের কাছে জানতে চাওয়া হলে প্রথমে তিনি তার কোন প্লট নেই বলে সম্পূর্ন অস্বীকার করেন। একই সময় বলেন, তার বিরুদ্ধে লিখে কিছু করা যাবে না। কারণ উচ্চপর্যায়ে তার রয়েছে বড় বড় আতœীয় স্বজন। পরে তিনি স্বীকার করেন চাঁচড়া এলাকায় তার একটি প্লট আছে। অভিযোগে আরো জানা যায়, কামরুজ্জামান প্লটের কথা অস্বীকার করলেও তার নামে বেনামে চাঁচড়া এলাকায় ৪ টি প্লট রয়েছে। একই ভাবে তিনি চাকুরি বিধি ভঙ্গ সরকারি চাকুরিরত অবস্থায় শহরের রেলরোডে তাকওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনসালটেন্ট নামে একটি ফার্ম করেছে। প্রোপাইটার হিসেবে নিজের নামে পৌরসভা থেকে নিয়েছে একটি ট্রেড লাইসেন্স। যা সম্পূর্ন সরকারি চাকুরি বিধি বর্হিভূত। ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারি (আচরণ) বিধিমালার ব্যক্তিগত ব্যবসা বা চাকুরি সংক্রান্ত বিধান (বিধি ১৭) বলা হয়েছে এই বিধির অন্য ধারায় বর্নিত শর্ত সাপেক্ষে কোন সরকারি কর্মচারি সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া তাহার সরকারি কর্তব্য ব্যতীত অন্য কোন ব্যবসায় জড়িত হতে বা কোন চাকুরি কিংবা কর্ম গ্রহন করতে পারবেন না। তবে একজন নন গেজেটেড সরকারি কর্মচারি সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া ক্ষুদ্র ব্যবসা গড়ে তুলতে পারবেন। যেখানে তিনি তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের শ্রম খাটাতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে তিনি ব্যবসার বিস্তারিত বর্ননাসহ সম্পত্তির বিবরণ দাখিল করবেন। অথচ উপসহকারি প্রকৌশলী কামরুজ্জামান এসব কোন নিয়ম কানুন মানেননি। এ বিষয়ে যশোর পিডাব্লিউডির নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কামরুজ্জামান আমার কাজে তো অনুপস্থিত নেই। তিনি তো ঠিকঠাক কাজ করছেন। তাছাড়া আমার কাছে তো কেউ অভিযোগ করেনি। এ গুলো দেখার জন্য সরকারের অন্য বিভাগ রয়েছে। এই সব কথা বলে তিনি কামরুজ্জামানের বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে ভুক্ত ভোগিরা সংশ্লিষ্টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আমু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।