মাদারীপুরের রাজৈরে পূর্ব বিরোধের জেরে ফের সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রামবাসী। রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এ সংঘর্ষ। উপজেলা সদরের বেপারীপাড়া ব্রিজের মোড়ে বদরপাশা ও পশ্চিম রাজৈর গ্রামবাসীর মধ্যে হওয়া এ সংঘর্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ (এএসপি) উভয়পক্ষের অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে দোকানপাট এবং পুলিশের গাড়ি। এমনকি ককটেল বিস্ফোরণও ঘটানো হয়েছে।
এ ঘটনার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুল হক জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
রাজৈর পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার বলেন, রোববার বিকালে বিবদমান উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয় সোমবার সকাল ১০টার দিকে থানার হলরুমে বসে ঝামেলার মীমাংসা করা হবে। কিন্তু সন্ধ্যার দিকে ফের সংঘর্ষে জড়ায় তারা। দুই গ্রামবাসী পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করতে দ্বিধা করেনি। এর আগে গত শনিবার রাতেও সংঘর্ষে জড়িয়েছিল এ দুই গ্রামের বাসিন্দারা।
পুলিশ, হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আতশবাজি ফাটানো থেকে শুরু হওয়া দ্বন্দ্বে শনিবার রাতে পশ্চিম রাজৈর ও বদরপাশা দুই গ্রামের মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে অন্তত ১০ পুলিশ সদস্যসহ ২৫ জন আহত হয়। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রোববার দুপুরে দুই গ্রামের লোকজনকে ডাকলে মীমাংসার জন্য রাজি হয় তারা। সোমবার সকাল ১০টার সময় মীমাংসার জন্য বসার কথা ছিল। এরই মধ্যে রোববার সন্ধ্যায় উত্তেজিত হয়ে ফের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তারা। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
এ সংঘর্ষ একপর্যায়ে কুমার নদের উত্তর ও দক্ষিণপাড়ের আঞ্চলিকতায় রূপ নিয়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এ ঘটনায় মাদারীপুরের এএসপি জাহাঙ্গীর আলম, রাজৈর থানার ওসিসহ উভয়পক্ষের অর্ধশত আহত হন। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় পশ্চিম রাজৈর গ্রামের মেহেদী মীর (২২), রাসেল শেখ (২৮), সাহাপাড়ার মনোতোষ সাহা (৫০), আলমদস্তারের তাওফিককে (৩৭) ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজৈর থানার ওসি মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ নিয়ে চতুর্থ ধাপে এ দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হলো। পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। কিন্তু সেই দায়ভার কাউকে দিতে চাই না। আশা করি, সকলের সহযোগিতায় এ সমস্যা দ্রুতই সমাধান করতে পারবো। আমরা চাই এ ঝামেলা থেকে তারা বের হয়ে আসুক।