ঝিনাইদহর কোটচাঁদপুর ভূমি অফিসে  টাকা ছাড়া কাজ করেন না সার্ভেয়ার মুরতুজ আলী

সার্ভেয়ার মরতুজ আলী। কাজ করেন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা ভূমি অফিসে। সার্ভেয়ার হিসাবে তার কাজ সরকারি স্বার্থযুক্ত ভূমি ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব আদায় ও জরিপ কাজে সহায়তা করা। এ কাজ করতে গিয়ে তিনি অবৈধ লেনদেনে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত কালীগঞ্জ ভূমি অফিসে কর্মরত ছিলেন। কালীগঞ্জে কর্মরত অবস্থায় দূর্নীতির অভিযোগে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে নড়াইল ও রাজশাহীতে বদলির আদেশ হয়। প্রতিবারই তিনি উপরমহল ম্যানেজ করে বদলি আটকে দেন। সে সময়ে আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম এর সাথে পারিবারিক যোগসূত্রতার পরিচয় দিয়ে তিনি সাধারণ মানুষকে বৃদ্ধাংগুলি দেখাতেন। তার হয়রানিতে অতিষ্ঠ কোন সেবাগ্রহিতা প্রতিবাদ করলে হুমকি দিতেন। বিগত বছরের ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর মরতুজ হয়ে যান জামায়াতের কর্মী।
কালীগঞ্জে অফিসে দির্ঘ ৮ বছরে অফিস সহকারী আনোয়ার হোসেনের সহযোগীতায় শক্তিশালী সিন্ডিগেট গড়ে তোলেন। তারা নামজারি ভেদে প্রতি কেসে এক হাজার থেকে এক লাখ পর্যন্ত আদায় করতেন। অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে বিল শ্রেণি ও ভিপি সম্পত্তি লিখে দেন পাবলিকের নামে। এসবের মাধ্যমে কেসভেদে ৫ লাখ টাকাও নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। হাটের চান্দিনা ভিটি আর আশ্রয়নের ঘর বন্দোবস্তের বানিজ্য করেও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। নায়েবদের প্রতি মাসে নামজারি প্রতি টার্গেট দিয়ে দিতেন।
ভূমি অফিসের ফ্রন্ট ডেস্কে বিধি বহির্ভূতভাবে সুজন নামে বহিরাগত একজনকে বসিয়ে আবেদন বানিজ্য গড়ে তোলেন। ড্রাইভার টুটুল ও নাইট গার্ড শহিদ এর মাধ্যমে পার্টি ম্যানেজ করতেন।
কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের সোহেল এর কাছ থেকে নামজারি বাবদ ২৫,০০০ টাকা নেন। ২০১৮ সালে মরতুজ, আনোয়ার, তপন, শহীদ মিলে ভূমি অফিসের ১২ টি গাছ কেটে বাড়ির আসবাবপত্র তৈরি করেন। এর আগে ২০১৬ সালে ঝিনাইদহ সদরের নগরবাথান হাট ইজারার জন্য ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ ওঠে। এসব অনিয়ম নিয়ে তার বিরুদ্ধে গেলেই নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে।
যদিও উপর মহল ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করার মাধ্যমে তার সকল অপকর্ম ঢাকা পড়ে থাকে। চা সিগারেটের জন্যও হাজার টাকার কম গ্রহণ করতেন না বলে অফিসের সবার কাছে তিনি হাজারী বাবু বলে পরিচিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময় অনেক ক্ষেত্রে ডিপি খতিয়ান লেখা হয়। এই অজুহাতে মূল খতিয়ানের সাথে মিলছে না বলে হাজার হাজার টাকা দাবি করতেন। নামের সামান্য ভুলের কারণে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা আদায় করতেন। দলিল দাতা বা গ্রহিতার যে কোন একজনের নাম সামান্য ভুল হলে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিরাট অংকের টাকা দাবী করেন। তিনি দম্ভোক্তি করে বলেন অফিসার টাকা নারী যেই জিনিসই দাবী করবেন তাকে তাই দেয়া হবে বিনিময়ে অফিসার কে অবশ্যই পকেটে রাখতে হবে।
কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন বাকুলিয়া গ্রামের এক মিস কেস নামপত্তনে উপজেলা ভূমি অফিসের করনিক আনোয়ার এবং মরতুজ মিলে দেড় লাখ টাকা গ্রহণ করেন। মরতুজ যেখানে যান অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোটচাঁদপুর উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের ইকড়া গ্রামের এক কৃষক জানান, কয়েকদিন আগে আমার একটি জমি সার্ভে করার জন্য আদালত আদেশ দেন। আদেশ পেয়ে সার্ভেয়ার মরতুজ সরোজমিনে এসে আমার কাছে টাকা দাবি করে দেখা করতে বলেন। তবে আমি তার সাথে আর দেখা করিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নায়েব জানান, সার্ভেয়ারের মরতুজ সহকারী কমিশনারের টেবিলে পাঠানোর আগে নথির উপরে বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন লিখে দিতেন, যা দেখে এসিল্যান্ড নিশ্চিত হতেন কোনটা মঞ্জুর বা নামঞ্জুর করতে হবে।
অভিযুক্ত সার্ভেয়ার মরতুজ আলী জানান, একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ রোটিয়ে বেড়াচ্ছে। সুনিদ্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আপনারা খতিয়ে দেখতে পারেন।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভূমি অফিসের দ্বায়িত্বে) কাজী আনিসুল ইসলাম জানান, সেবাগ্রহিতা ভূমি মালিকদের হয়রানি ও তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের এমন কোন অভিযোগ জানা নেই। তবে, কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান।